দেশে প্রথম থ্রি-হুইলার কারখানা চালু করলো রানার অটো
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথমবারের মতো দেশেই এলপিজি ও সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলার উৎপাদন শুরু করেছে রানার অটোমোবাইলস পিএলসি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক থ্রি-হুইলার ব্র্যান্ডের ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানার পথচলা শুরু হলো।
শনিবার ভালুকায় রানার অটোমোবাইলস পিএলসি ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানায় প্রাঙ্গণে থ্রি-হুইলার উৎপাদন প্লান্টের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সালমান ফজলুর রহমান বলেন, আমি আজকে খুবই আনন্দিত, ভালুকায় দেখলাম অনেক কারখানা। এখানে দেখলাম আন্তর্জাতিক মানের কারখানা হয়েছে। শিল্প সবাই করতে পারে, কিন্তু মন থেকে তৈরি করা কঠিন কাজ। এ দেশের মানুষ সব পারেন, এটা শতভাগ বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে, শুধু তৈরি পোশাকে নির্ভর করবো না। এখন ৭০ ভাগ থ্রি-হুইলার দেশে উৎপাদন হয়, বাকি ৩০ ভাগ আমদানি করা হচ্ছে। একদিন দেশে শতভাগ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, সারাবিশ্ব পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত, তাই এটা পরিবেশবান্ধব হবে। ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলারের নিবন্ধন নেই, এটা কেউ বলে না। নিবন্ধন না থাকায় রাজস্ব হারায় দেশ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সংশ্লিষ্ট সচিবের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবো।
সালমান এফ রহমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর আমাদের সরকার এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করছে। আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আছি। আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পনীতি ও অটোমোবাইলস শিল্পের প্রসারেও সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিম বলেন, ইমপোর্ট পলিসি দেখা দরকার। মেড ইন বাংলাদেশে যেতে হবে। গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে অথচ নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে না, এটা দেখতে হবে। ডলার সংকটে সমস্যা হবে। এখনই সময় লোকাল শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া। লোকাল শিল্পকে এগিয়ে নিলে প্রধানমন্ত্রীর ৪১’ এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবো। আমাদের নিজস্ব বাজারও বড়।
অনুষ্ঠানে নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, দেশে থ্রি হুইলার ২৫ লাখ চলে, মাত্র এক লাখের নিবন্ধন আছে। এর থেকে ৫০ লাখ ইলেকট্রনিক ইজিবাইকের নিবন্ধন নেই। সরকার আমদানির অনুমতি দেবে অথচ চোরের মতো বিক্রি করবো এটা হবে না। এর একটা সমাধান দরকার। ৩০০ কোটি টাকা এখানে বিনিয়োগ করেছেন। এই শিল্পের সবাইকে এক হওয়ার এখনই সময়।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে রানার অটোমোবাইলস পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সুবীর চৌধুরী বলেন, রানার অটোমোবাইলস পিএলসি দেশের মোটরসাইকেল শিল্পে প্রথম উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আজ থ্রি- হুইলার শিল্পে পা রাখলাম। আশা করছি, মোটরসাইকেলের মতো এই শিল্পেও আমরা সাফল্য অর্জন করবো।
অনুষ্ঠানে রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, আজ আনন্দের দিন, দেশে প্রথম থ্রি-হুইলার ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানার যাত্রা শুরু করল। আর এই স্বপ্নযাত্রাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, ব্যাংকসহ সব কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সহযোগিতা করেছে, তাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
উল্লেখ্য, প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমিতে গড়ে ওঠা রানারের ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানায় প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার গাড়ি উৎপাদন করতে সক্ষম। বাজাজ অটোর প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় ইঞ্জিনের কিছু উপাদান ছাড়াও ওয়েল্ডিং, চেসিস, বডি ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলসহ অধিকাংশ যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি হবে। এর ফলে ৩০০ মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। রানার বাজাজ থ্রি-হুইলার হবে দেশের মানুষের জন্য যাত্রাপথে যোগাযোগের অন্যতম বাহন।